Monday, October 28, 2019


OXFORD, United Kingdom — The Rockefeller Foundation and UBS Optimus Foundation are backing a new financing tool to bring clean water to 1.4 million Ugandan school children, saying the model can potentially be replicated across other countries and sectors.  

Clean Water in School;

Wednesday, March 14, 2018

তিবেদন দিলেই দুদকের দায়িত্ব শেষ হয় না

সড়ক নির্মাণে দুর্নীতি


আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮, ১১:০৫
প্রিন্ট সংস্করণ

সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজে আর্থিক অনিয়মের উৎস খুঁজে বের করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাতিষ্ঠানিক দল যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাতে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী (ইট, বালু, বিটুমিন, সিমেন্ট) দিয়ে সড়ক নির্মাণ, কাজ শেষ হওয়ার আগে বিল প্রদান, টেন্ডার নিয়ে কারসাজি, ঘুষ গ্রহণ ও নজরদারির দুর্বলতা বিশেষভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এতে আর্থিক অনিয়মের পুরো চিত্র উঠে এসেছে বলা যাবে না।
প্রতিবেদনে ঠিকাদার ও উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি তথা প্রকৌশলীদের যোগসাজশের কথা বললেও কারা ঠিকাদারি পায়, সে কথা উল্লেখ করা হয়নি। ঠিকাদার ও উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অলিখিত আঁতাতের কথা সবার জানা। আর সেই ঠিকাদার রাজনৈতিক ক্ষমতাবলয়ের লোক হলে তো তিনি আইনকানুন মানার প্রয়োজন বোধ করেন না। কেবল সড়ক নয়, জল–স্থলের যেখানেই উন্নয়নকাজ হচ্ছে, সেসবের ঠিকাদারি পাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। সব সরকারের আমলেই এটি হয়ে আসছে। কাজের অভিজ্ঞতা থাকুক বা না-থাকুক, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের কাজটি পাইয়ে দিতে হয়। এ অবস্থায় উন্নয়নকাজে ন্যূনতম সততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি আশা করা যায় না।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক টিম বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা, অধিদপ্তরের নথি পর্যালোচনা, সরেজমিন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন, গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং কমিশনের গোয়েন্দা উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন না করা, প্রভাবশালীদের/ঠিকাদারের চাপে এবং পরস্পর যোগসাজশে একশ্রেণির প্রকৌশলী/কর্মকর্তা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, সিন্ডিকেট পদ্ধতিতে ঠিকাদার নিয়োগ, কাজ পাওয়ার জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তি, পরামর্শক সংস্থা, সরকারি কর্মকর্তাদের উৎকোচ দেওয়ার মতো যে ভয়াবহ আর্থিক অনিয়মের পাশাপাশি প্রতিকারে ২১ দফা সুপারিশও করা হয়েছে।
কিন্তু দুদকের প্রতিবেদনের ঘাটতি হলো তারা সড়ক বিভাগের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরলেও এর কুশীলবদের নাম-ঠিকানা ঊহ্য রেখেছে। দুদক যদি দুর্নীতিবাজদের শনাক্তই করতে না পারে, তাহলে এসব প্রতিবেদন বা সুপারিশ কোনো কাজে আসবে না। আর পাঁচটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো তারা প্রতিবেদন তৈরি কিংবা সুপারিশ পেশ করে দায়িত্ব শেষ করতে পারে না। প্রতিবেদনের আলোকে সড়ক বিভাগে যেসব দুর্নীতি হয়েছে, সেসব নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। উন্নয়নের নামে সরকারি তথা জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতেই হবে।
কেবল সড়ক নয়, সরকারের প্রতিটি বিভাগের উন্নয়নকাজেই এ রকম আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। অন্যান্য বিভাগ সম্পর্কেও প্রতিবেদন তৈরি এবং তা জনগণের সামনে প্রকাশ করা হোক।

কারও কোনো জবাবদিহি নেই?

মহাদুর্ভোগের মহাসড়ক

 
আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮, ১১:১০
প্রিন্ট সংস্করণ
৩ মার্চ প্রথম আলোর প্রথম পাতার প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘মহাসড়ক মানেই মহাদুর্ভোগ’। চলাচলের পথে দুর্ভোগ নিশ্চয়ই পীড়াদায়ক সমস্যা; কিন্তু সারা বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর যে দুর্দশা হয়েছে, তা শুধু মানুষের দুর্ভোগেরই কারণ হচ্ছে না, জাতীয় অর্থনীতির বিরাট ক্ষতিরও কারণ হচ্ছে। ৬ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে ১২ ঘণ্টা, কখনো কখনো ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যয় হলে শুধু মানুষের যাতায়াত নয়, পণ্য পরিবহন তথা ব্যবসা-বাণিজ্যেও শ্লথগতি সৃষ্টি হয়। সুতরাং, দেশের সড়ক-মহাসড়কের দুর্দশা জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথেও একটা অন্তরায়। এবং এই দুরবস্থা সাময়িক নয়, বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে; একধরনের স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিযোগিতা-সক্ষমতাবিষয়ক সমীক্ষায় সড়কের মান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত; কেননা অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় কোন দেশের সক্ষমতা কেমন, তা অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সড়ক অবকাঠামোর গুণগত মানের ওপরও নির্ভরশীল। ডব্লিউইএফের ২০১৭ সালের প্রতিবেদন বলছে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর মান নিকৃষ্টতম থেকে মাত্র এক ধাপ ওপরে। এক নেপাল ছাড়া আর সব দেশের সড়ক আমাদের চেয়ে উৎকৃষ্ট।
অথচ আমাদের দেশে সড়ক নির্মাণের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের সড়ক নির্মাণব্যয় সবচেয়ে বেশি। গত বছরের জুনে বিশ্বব্যাংকের এক পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণের পেছনে প্রতি কিলোমিটারে খরচ করা হয়েছে ২৫ লাখ মার্কিন ডলার। ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণেও একই ব্যয় হয়েছে। কিন্তু রংপুর-হাটিকুমরুল, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়া—এই তিনটি চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণে অবিশ্বাস্য মাত্রায় বেশি ব্যয় করা হয়েছে। এই তিন মহাসড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় করা হয়েছে যথাক্রমে ৬৬ লাখ, ৭০ লাখ ও ১ কোটি ১৯ লাখ মার্কিন ডলার। সড়ক নির্মাণে এত বিপুল ব্যয় শুধু এশিয়ায় কেন, সারা বিশ্বের কোথাও হয় না। যেমন বিশ্বব্যাংকের সূত্রেই জানা গেছে, ভারতে চার লেনের এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ১১ লাখ থেকে ১৩ লাখ ডলার; চীনে ১৩ লাখ থেকে ১৬ লাখ ডলার এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে ৩৫ লাখ ডলার।
প্রথম আলোর ৩ মার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-সেতু মেরামত ও নির্মাণের পেছনে গত আট বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অথচ অর্ধেকের বেশি সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা শোচনীয়। একটি সড়ক নির্মাণ করার পর কোনো রকম মেরামত ছাড়াই তা টানা ১৫ বছর ভালো থাকবে—এটা ধরে নিয়েই সড়কের নকশা ও নির্মাণকাজ করার রীতি। অথচ নির্মাণের পর এক বছর না পেরোতেই সড়ক-মহাসড়কের স্থানে স্থানে ভেঙে যায়, খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। ফলে বছর না ঘুরতেই সেগুলো মেরামতের প্রয়োজন দেখা দেয়। মেরামতের কাজও ভালোভাবে করা হয় না, ফলে সেগুলো টেকসই হয় না, অবিরাম মেরামতি লেগেই থাকে, অবিরাম কোটি কোটি টাকা ব্যয় হতে থাকে। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও মেরামত নিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থের অপচয় একটা স্থায়ী ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলোর এই চিরদুরবস্থার অন্যতম প্রধান কারণ নির্মাণ ও মেরামতে গলদ। অতিরিক্ত পরিমাণে মালামাল বোঝাই করে যানবাহন চলাচল এবং পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার দুর্বলতাও সড়ক নষ্ট হওয়ার কারণ বটে; তবে প্রথম কারণটিই প্রধান। নির্মাণকাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা হয় না এ কারণে যে এ ক্ষেত্রে ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতি চলে। আমাদের প্রশ্ন, বছরের পর বছর এই যে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার চর্চা চলছে, এর কি কোনো জবাবদিহি নেই?